- জাপানের ইয়ানমারের দূরনিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তির হারভেস্টরের মেরামত সেবাও এখন অ্যাপনির্ভর।
- যোগাযোগের ছয় ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যান মেরামতকারী।
- কতটুকু জমির ধান কাটা হলো, তা মালিক জানতে পারেন মুঠোফোনে।
- হারভেস্টরে ১৫৩ ধরনের সমস্যার কথা আগেই জানায় অ্যাপ।
- হারভেস্টর কোথায় আছে, তা-ও জানা যায় মুঠোফোনে।
মো. ইমরান হোসেইন শিক্ষকতা করেন। পাশাপাশি তাঁর পরিচালনায় চারটি ধান কাটার মাড়াইযন্ত্র বা হারভেস্টর রয়েছে। ইমরান বলেন, ২০১৯ সালে তিনি প্রথম জাপানের ইয়ানমারের একটি কম্বাইন হারভেস্টর কিনেছিলেন ২৮ লাখ টাকায়, যার ১৪ লাখ টাকা সরকার ভর্তুকি দিয়েছিল। ইতিমধ্যে সেই হারভেস্টর দিয়ে তাঁর ৫০ লাখ টাকা উঠে গেছে।
শিক্ষকতা করে হারভেস্টর কীভাবে পরিচালনা করেন, জানতে চাইলে ইমরান হোসেইন বলেন, সবকিছু তো এখন মুঠোফোনে। নতুন প্রযুক্তির হারভেস্টর কতটা ধান বা গম কাটল, কোথায় আছে, যন্ত্রপাতিতে কোনো সমস্যা দেখা দিচ্ছে কি না—সবকিছু মুঠোফোন বা ল্যাপটপে দেখা যায়। ফলে ফাঁকি দেওয়ার আর সুযোগ নেই।
ইমরানের বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। তাঁর হারভেস্টরগুলো বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে ধান কাটে। তিনি বলেন, ‘আগে দেখা যেত, ধান কাটলাম দেড় একরের, জমির মালিক দাবি করলেন, জমি আসলে এক একর। এ নিয়ে বিবাদ হতো। এখন জমির মালিককে মুঠোফোনে উঠে আসা হিসাব দেখিয়ে দিই। বিরোধের কিছু থাকে না।’
কৃষিযন্ত্রে ইন্টারনেটনির্ভর এই প্রযুক্তির নাম ‘স্মার্ট অ্যাসিস্ট রিমোট সিস্টেম’। জাপানের সুপরিচিত কৃষিযন্ত্র নির্মাতা ইয়ানমার করপোরেশনের এই প্রযুক্তির হারভেস্টর বাংলাদেশের বাজারে বিপণন করছে এসিআই মোটরস। দেশের কৃষি যন্ত্রপাতি খাতের শীর্ষস্থানীয় এই প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮ সালে বাংলাদেশে ইয়ানমারের পরিবেশক হয়।
এসিআই জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত তারা প্রায় এক হাজার ইয়ানমার হারভেস্টর বিক্রি করেছে। এ বছর আরও এক হাজার হারভেস্টর বিক্রির আশা করছে। উল্লেখ্য, কম্বাইন হারভেস্টর ধান কেটে মাড়াই করে তাৎক্ষণিক বস্তায় ভরে দেয়।
এসিআই মোটরসের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস প্রথম আলোকে বলেন, যাঁদের পক্ষে সারা দিন হারভেস্টরের সঙ্গে থেকে পরিচালনা ও তদারকি করা সম্ভব নয়, তাঁদের জন্য দূরনিয়ন্ত্রণব্যবস্থার এই হারভেস্টর কেনা লাভজনক। কারণ, এতে মালিক ঘরে বসেই সবকিছু জানতে পারেন। তাঁকে পুরোপুরি চালকের ওপর নির্ভর করতে হয় না। তিনি বলেন, ‘এই হারভেস্টরে সরকার ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ ভর্তুকি দিচ্ছে। এই মৌসুম থেকে আমরা ছয় মাসের জায়গায় এক বছরে কিস্তি শোধের ব্যবস্থা রেখেছি। পুরো বছর নয়, শুধু মৌসুমের সময় কিস্তি দিলেই হবে।’
নতুন প্রযুক্তি যেভাবে কাজ করে
ইয়ানমারের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা যায়, স্মার্ট অ্যাসিস্ট রিমোট সিস্টেমে জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) রয়েছে। জিপিএস ও যোগাযোগ টার্মিনাল ব্যবহার করে ‘স্মার্ট অ্যাসিস্ট রিয়েল টাইম অপারেটিং’ অবস্থার বিস্তৃত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে। সেই তথ্য-উপাত্ত ওই কৃষিযন্ত্রে সংরক্ষিত হয়, যা কার্যক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এই প্রযুক্তিতে হারভেস্টরের মালিক যেকোনো জায়গা থেকে যন্ত্রটি কোথায় আছে, তা জানতে পারেন। যন্ত্রটি এলাকার বাইরে অন্যত্র নিয়ে গেলে সেটি কোন অবস্থায় আছে, তা জানা যায় মুঠোফোনেই।
হারভেস্টরে একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর মেরামত সেবা দরকার হয়, যা সার্ভিসিং নামে পরিচিত। ১৫৩ ধরনের যন্ত্রাংশে কোনো ধরনের সমস্যা হলে তা মালিক মুঠোফোনের মাধ্যমেই বুঝতে পারেন।
এসিআইয়ের সুব্রত রঞ্জন দাস জানান, মেরামতের দরকার হলে অ্যাপের মাধ্যমেই যোগাযোগ করতে পারেন হারভেস্টরের মালিকেরা। যোগাযোগ করার ছয় ঘণ্টার মধ্যে এসিআইয়ের মেকানিক বা মেরামতকারী পৌঁছে যান। ফলে হারভেস্টরটিকে দিনের পর দিন মেরামতের জন্য বসে থাকতে হয় না। আবার অ্যাপের মাধ্যমে যেহেতু মালিক আগাম জানতে পারেন কোনো যন্ত্রাংশে সমস্যা হলো কি না, সেহেতু ইয়ানমার হারভেস্টরকে অকেজো অবস্থায় দিনের পর দিন বসে থাকতে হয় না। হারভেস্টরের চালাতে ও পরিচালনা বুঝতে এসিআইয়ের পক্ষ থেকে মালিক ও চালককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
এসিআই জানায়, এবার দ্রুত মেরামত সেবা দিতে তারা ৪০০ জন মেকানিকের পাশাপাশি তিনটি সার্ভিস ভ্যান প্রস্তুত রেখেছেন। সার্ভিস ভ্যানে মেরামতের যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ থাকে। এগুলো মূলত হাওর এলাকায় কাজ করবে। পাশাপাশি হাওরে ধান কাটা শেষে অন্য এলাকায় যাবে, যেখানে ইয়ানমারের হারভেস্টর বেশি আছে। সুব্রত রঞ্জন দাস বলেন, ইয়ানমার অন্যান্য দেশে যে মানের সেবা দেয়, বাংলাদেশে এসিআই সেই মানের সেবাই দিচ্ছে।
৫০-৭০% ভর্তুকি
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে ফসল চাষ, সেচ, নিড়ানি ও কীটনাশক প্রয়োগে ৯৫ শতাংশ যান্ত্রিকীকরণ হয়েছে। যদিও চারা রোপণের ক্ষেত্রে যান্ত্রিকীকরণ মাত্র ২ শতাংশ এবং শস্য কর্তন, মাড়াই ও বস্তা ভরার ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ।
সরকার কৃষিতে বাড়তে থাকা শ্রমিক সংকট ও উৎপাদন ব্যয় কমাতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণে ভর্তুকি দিচ্ছে। এ জন্য নেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ২০ কোটি টাকার ‘সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ নামের একটি প্রকল্প। এর আওতার হারভেস্টর কিনতে ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হয়। তবে হাওর উপকূল এলাকায় ভর্তুকি পাওয়া যায় ৭০ শতাংশ। হাওরে আগাম পানি এসে ধান যাতে নষ্ট না হয়, সে জন্য বাড়তি জোর দিচ্ছে সরকার।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ অনুবিভাগ) মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল প্রথম আলোকে বলেন, দেশে কৃষি খাতে শ্রমিকসংখ্যা কমছে। মজুরি অনেক বেড়ে যাচ্ছে। কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের ফলে কৃষকের উৎপাদন খরচ কমবে। তিনি জানান, এ বছর কৃষি যন্ত্রে ভর্তুকির জন্য ২০৪ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
দেশে এখন পাঁচটি কোম্পানির হারভেস্টর সরকারের ভর্তুকির তালিকায় রয়েছে। এসিআইয়ের ‘ইয়ানমার স্মার্ট অ্যাসিস্ট রিমোট সিস্টেম’ হারভেস্টরের পাশাপাশি ভর্তুকি পায় মেটাল গ্রুপ, আবেদিন, আলিম ইন্ডাস্ট্রিজ ও চিটাগাং বিল্ডার্সের হারভেস্টরও।
হারভেস্টরের মালিক গোপালগঞ্জের ইমরান হোসেইন বলেন, কম্বাইন হারভেস্টর দিয়ে এক একর জমির ধান কাটতে এক ঘণ্টা ২০ মিনিটের মতো সময় লাগে। জমির মালিকের খরচ পাঁচ হাজার টাকা। যেসব এলাকায় শ্রমিকসংকট রয়েছে, সেখানে এক একর জমির ধান কাটতে ১৫ হাজার টাকাও লেগে যায়। মানে হলো, যন্ত্রের খরচের তিন গুণ।
Press Release Links:
Link 1Discover Other News
17 February 2024
ACI Motors emerges as generator market leader
29 November 2023
Yamaha's two new bikes in the country's market
22 November 2023
Yamaha service centre opens in Mohammadpur
12 November 2023