কৃষিযন্ত্র ব্যবহারে বাংলাদেশ নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। এক থেকে দেড় দশক আগেও দেশের কৃষিকাজে শুধু পাওয়ারটিলার ও ডিজেল ইঞ্জিনের ব্যবহার ছিল। সময়ের ব্যবধানে সেখানে যুক্ত হয়েছে ট্রাক্টর, কম্বাইন হারভেস্টার ও রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার ইত্যাদি যন্ত্রপাতি।
আধুনিক কৃষিযন্ত্রের তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন কম্বাইন হারভেস্টারের স্মার্ট অ্যাসিস্ট রিমোট সিস্টেম প্রযুক্তি। যা বাংলাদেশে এনেছে এসিআই মোটরস ও জাপানের ইয়ানমার অ্যাগ্রিবিজনেস। এটি ব্যবহারে হারভেস্টারের মালিক খুব সহজেই যন্ত্রটির অবস্থান জানতে পারবেন। সেই সঙ্গে কতটুকু জমির ধান কাটা হয়েছে, কতটুকু সময় চালানো হয়েছে, যন্ত্রে কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে কি না অথবা কোনো সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা আছে কি না ইত্যাদি সহজেই জানা যাবে। মূলত মোবাইলে একটি অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে এসব তথ্য পাবেন হারভেস্টারের মালিক।
কৃষিযন্ত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কৃষিযন্ত্র ব্যবহারে ভিন্নতা আসে। বাংলাদেশে যেহেতু মাথাপিছু আয় বাড়ছে, সেহেতু কৃষি খাতে শ্রমিকসংকট তৈরি হচ্ছে। ফলে নতুন ধরনের কৃষিযন্ত্র ব্যবহারে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের। পাশাপাশি সরকারও কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারে উৎসাহ দিচ্ছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএইউ) গবেষণা অনুযায়ী, কৃষিযন্ত্রের বাজারের প্রবৃদ্ধি বছরে ২০ শতাংশের কাছাকাছি। সেচযন্ত্র, ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার, ট্রান্সপ্ল্যান্টার, হারভেস্টার, মাড়াই যন্ত্র ইত্যাদির বড় অংশ আমদানি করা হয়। দেশেও কৃষিযন্ত্র তৈরির বেশ কিছু কারখানা গড়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক উপাচার্য এম এ সাত্তার মণ্ডল এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের কৃষি যান্ত্রিকীকরণ এখন পর্যন্ত বেশ দক্ষতার সঙ্গে এগিয়েছে। ভবিষ্যতে উৎপাদন বৃদ্ধি ও ব্যয় সাশ্রয় করে কৃষিকে অধিক পরিমাণে লাভজনক করতে আরও আধুনিক যন্ত্রপাতির দিকে যেতে হবে। তিনি বলেন, আধুনিক যন্ত্রপাতি যত আসবে, তত শিক্ষিত ও চৌকস তরুণেরা তত বেশি কৃষিতে আসবেন। বিনিয়োগ বাড়বে। এটি খুবই ভালো লক্ষণ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে ফসল চাষ, সেচ, নিড়ানি ও কীটনাশক প্রয়োগে ৯৫ শতাংশ যান্ত্রিকীকরণ হয়েছে। আর চারা রোপণের ক্ষেত্রে ২ শতাংশ এবং শস্য কর্তন, মাড়াই ও বস্তা ভরার ক্ষেত্রে যান্ত্রিকীকরণ মাত্র ৫ শতাংশ।
বাংলাদেশের প্রধান ফসল ধান। সেই ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয়। উন্নত দেশগুলোতে ধান উৎপাদনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ট্রাক্টর, হারভেস্টার, রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার ও ড্রোন ব্যবহার হচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশে শস্য কর্তন, মাড়াইকরণ ও বস্তাবন্দী করতে কম্বাইন হারভেস্টারের ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এসিআই মোটরসের হাত ধরে বাংলাদেশে কম্বাইন হারভেস্টারের যাত্রা শুরু হয়। এসিআই বিশ্বখ্যাত ইয়ানমার জাপানের কম্বাইন হারভেস্টার কৃষকদের সরবরাহ করে আসছে।
নতুন প্রযুক্তি
এসিআই জানায়, স্মার্ট অ্যাসিস্ট রিমোট সিস্টেম কৃষকদের জন্য একটি সম্পূর্ণ সমাধান। জিপিএস ও যোগাযোগ টার্মিনাল ব্যবহার করে স্মার্ট অ্যাসিস্ট রিয়েল টাইমে অপারেটিং অবস্থার বিস্তৃত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে। সেই তথ্য-উপাত্ত ওই কৃষিযন্ত্রে সংরক্ষিত হয়, যা কার্যক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। একই সঙ্গে তা হারভেস্টারের ক্ষতি হওয়া রোধ করে। এই প্রযুক্তি যন্ত্রের সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনাকে সহজ করে। যন্ত্রের জীবনচক্রে ব্যয় কমাতে ভূমিকা রাখে।
অনেক সময় যন্ত্রটি এলাকার বাইরে অন্যত্র নিয়ে গেলে সেটি কোনো অবস্থায় আছে, তা জানতে পারেন না স্বত্বাধিকারী। এ ক্ষেত্রে যন্ত্রের সঙ্গে যিনি থাকেন, তাঁর তথ্যের ওপর নির্ভর করতে হয় মালিককে। স্মার্ট অ্যাসিস্ট রিমোট সিস্টেম থাকলে হারভেস্টারের স্বত্বাধিকারী জানতে পারবেন, তাঁর যন্ত্রটি কোথায় আছে। সেই সঙ্গে হারভেস্টারটি অলস বসে আছে কি না, কত ঘণ্টা চলছে, কৃষক কতটুকু জমির ধান বা গম কেটেছেন, তা–ও জানতে পারবেন। হারভেস্টারটিতে কোনো ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার তথ্য পেয়ে যাবেন স্বত্বাধিকারী।
বিএইউর কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক মঞ্জুরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, স্মার্ট অ্যাসিস্ট রিমোট সিস্টেম ব্যবহারের ফলে কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে আগের থেকেও দক্ষতার সঙ্গে সেবা দিতে পারবেন উদ্যোক্তারা। এতে করে কৃষকের খরচ কমে যাবে।
জানতে চাইলে এসিআই মোটরসের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস বলেন, নতুন প্রযুক্তির হারভেস্টারটির সুবিধা প্রথমত, এটি কতটুকু জমির ধান কেটেছে, তা দূর থেকেই জানতে পারবেন এর মালিক। দ্বিতীয়ত, হারভেস্টারটি কোনো কারণে মেরামত প্রয়োজন হলে তা আগেই জানা যাবে। এতে মেরামতসেবা পাওয়া ও দেওয়া সহজ হবে। তৃতীয়ত, সরকার জানতে পারবে কোন এলাকায় কতগুলো হারভেস্টার কাজ করছে। কোনো এলাকায় হারভেস্টার কম থাকলে সেখানে জরুরি প্রয়োজনে পাঠানো যাবে।
সরকার কৃষির যান্ত্রিকীকরণে তিন হাজার কোটি টাকার নতুন একটি প্রকল্প নিয়েছে উল্লেখ করে সুব্রত রঞ্জন আরও বলেন, নতুন প্রযুক্তির হারভেস্টারটি কিনতে হাওরে ৭০ শতাংশ ও অন্য এলাকায় ৫০ শতাংশ ভর্তুকি পাওয়া যাবে। একটি হারভেস্টারের দাম ৩০ লাখ টাকার মতো রাখবে এসিআই।
কৃষি যান্ত্রিকীকরণে তিন হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি পাস হয়েছে। এর আওতায় দুই হাজার কোটি টাকার মতো রাখা হয়েছে কৃষিযন্ত্রে ভর্তুকি বাবদ। এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ অনুবিভাগ) মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল প্রথম আলোকে বলেন, আগামী বোরো মৌসুম থেকেই কার্যক্রম শুরু হবে।
Press Release Links:
Link 1Discover Other News
07 October 2020
ACI Motors’ food sector contribution during COVID-19
08 September 2020
ACI Motors and HIMOINSA hold signing ceremony
07 May 2020
Yanmar harvester: a blessing for farmers
25 March 2020