প্রিমিয়াম বাইকের বাজারে আধিপত্য ইয়ামাহার
All Businesses

প্রিমিয়াম বাইকের বাজারে আধিপত্য ইয়ামাহার

25 March, 2020

Home » News » 2020 » প্রিমিয়াম বাইকের বাজারে আধিপত্য ইয়ামাহার

আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির বাজারে প্রতিষ্ঠানটির অংশীদারি প্রায় ৫০ শতাংশের বেশি। বর্তমানে মোটরসাইকেলের বাজারেও সাফল্যের পরিচয় দিচ্ছে এ শিল্প গ্রুপ। সম্প্রতি কালের কণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে কম্পানির নানা পরিকল্পনা তুলে ধরেন এসিআই মোটরসের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস।
দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে কয়েক দশক ধরে অনবদ্য অবদান রেখে যাচ্ছে অ্যাডভান্সড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (এসিআই) লিমিটেড। ওষুধশিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু হলেও প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা এখন নানা খাতে বিস্তৃত। খাদ্যপণ্য, রাসায়নিক, কৃষি যন্ত্রপাতি, বাণিজ্যিক যান, মোটরসাইকেল, ইলেকট্রনিকসসহ প্রায় ২৫টি কম্পানি মিলে একটি বৃহত্ শিল্পগোষ্ঠী এসিআই। আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির বাজারে প্রতিষ্ঠানটির অংশীদারি প্রায় ৫০ শতাংশের বেশি। বর্তমানে মোটরসাইকেলের বাজারেও সাফল্যের পরিচয় দিচ্ছে এ শিল্প গ্রুপ। সম্প্রতি কালের কণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে কম্পানির নানা পরিকল্পনা তুলে ধরেন এসিআই মোটরসের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস।

তিনি বলেন, ‘বাজারে যেসব মোটরসাইকেলের দাম আড়াই লাখ টাকার ওপরে এসবের মধ্যে ক্রেতারা বেশি পছন্দ করেন ইয়ামাহা। দেশে প্রিমিয়াম ক্যাটাগরির মোটরসাইকেল ব্যবহারকারী ৭ শতাংশ। বাকি ৯৩ শতাংশ ভোক্তা ব্যবহার করেন দুই লাখ টাকার নিচের বাইক। এই ৭ শতাংশের বাজারের ৮০ শতাংশই ইয়ামাহার মোটরসাইকেল বিক্রি হয়। জাপানের বিখ্যাত ইয়ামাহা মোটরসাইকেল দেশের বাজারে সরবরাহ করে আসছে এসিআই মোটরস। আমরা আশা করছি অভিজাত এই মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীর বাজার ধরে রাখবে এসিআই মোটরস। আমরা ১২৫ সিসি ও ১৫০ সিসি ইয়ামাহা মোটরসাইকেল বাজারজাত করি। ১৫০ সিসিতে অ্যান্টিলক ব্রেকিং সিস্টেম (এবিএস) এবং ফুয়েল ইঞ্জেকশন টেকনোলজি আমরাই প্রথম দেশের বাজারে নিয়ে আসি। ফুয়েল ইঞ্জেকশন টেকনোলজিতে কার্বোরেটর ইঞ্জিনের তুলনায় ১১ শতাংশ তেল সাশ্রয় হয় এবং ১৪ শতাংশ কম কার্বন নিঃসরণ হয়। এ ছাড়া বিগিনারদের জন্য আমরা ১১০ সিসি স্কুটার ‘স্ট্রিট র্যালি’ এবং ১২৫ সিসি শ্রেণিতে সবচেয়ে সেরা ‘স্যালুটো’ সহজলভ্য করার চেষ্টা করছি।’

সুব্রত রঞ্জন দাস বলেন,  ‘প্রিমিয়াম ক্যাটাগরির এ বাজারটি দিন দিন বড় হচ্ছে। আমাদের আশা এ বাজারটি আগামী চার বছরে আরো চার গুণ বাড়বে। গত বছর এসিআই মোটরস ২৫ হাজার মোটরসাইকেল বিক্রি করেছে। আগামী পাঁচ বছরে তা এক লাখে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছে।’

বাজারে ইয়ামাহার চাহিদার কথা তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক আরো বলেন, গত বছর পুরো মোটরসাইকেলের বাজারের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ শতাংশ। সেখানে ইয়ামাহার একার প্রবৃদ্ধি হয় ৩৩ শতাংশ। আর চলতি বছরে এই খাতের প্রবৃদ্ধি যেখানে ৭ শতাংশ, সেখানে ইয়ামাহার প্রবৃদ্ধি হয় ৭৮ শতাংশ।

এ সাফল্যের কারণ জানতে চাইলে সুব্রত রঞ্জন দাস বলেন, ‘মোটরসাইকেল বিক্রয়োত্তর সেবায় প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের প্রধান আকর্ষণ। প্রতিটি ডিলার পয়েন্টে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ডায়াগনস্টিক টুলসের (ওয়াইডিটি) সুব্যবস্থা আছে। এই পদ্ধতির কারণে মোটরসাইকেলের সমস্যাগুলো সহজে চিহ্নিত করা যায়। এই টুলকিটের উপস্থিতি আমরা প্রতিটি ডিলার পয়েন্টে নিশ্চিত করে থাকি। বর্তমানে সারা দেশে এসিআই মোটরসের ৬৩ ডিলার পয়েন্ট আছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় পাঁচটি।’

তিনি বলেন, ‘অন্যরা মোটরসাইকেল বিক্রি করে এবং বিক্রির পরও সেবা দেয়। কিন্তু এসিআই মোটরস শুধু সেবাই নয়, ভোক্তাদের সঙ্গে একটি শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করে। সামাজিক উদ্যোগে আমরা একসঙ্গে চলি। আমাদের এই উদ্যোগের নাম ইয়ামাহা রাইডার ক্লাব। সম্প্রতি সবাইকে নিয়ে ইয়ামাহার লোগো তৈরি করে বিশ্ব রেকর্ড করেছি। ৮০০ বাইকার মোটরসাইকেল চালিয়ে কক্সবাজার গেছেন এই ক্লাবের উদ্যোগে। এ ছাড়া আগ্রহী ছেলে ও মেয়ে উভয়কেই সপ্তাহে দুই দিন বিনা মূল্যে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।’

সুব্রত রঞ্জন দাস আরো বলেন, ‘এই শিল্পের চ্যালেঞ্জ কম নয়। মোটরসাইকেলের বাজারকে এগিয়ে নিতে হলে স্থানীয়ভাবে আনুষঙ্গিক উপকরণের বাজার তৈরি করতে হবে। তৈরি করতে হবে ভেন্ডর। প্রয়োজনীয় প্রণোদনা দিয়ে তাদের নিয়ে আসতে হবে। কারণ কোনো দেশেই মোটরসাইকেলের কোনো কম্পানি কম্পোন্যান্ট তৈরি করে না। এ ছাড়া কমাতে হবে মোটরসাইকেল নিবন্ধন ফি। আমাদের দেশে নিবন্ধন ফি অনেক বেশি। ভারতে যেখানে মোটরসাইকেল নিবন্ধন করতে লাগে এক হাজার রুপি; সেখানে বাংলাদেশে লাগে দুই বছরের জন্য ১৩ হাজার ৮৪ টাকা এবং ১০ বছরের জন্য ২২ হাজার ১০০ টাকা।’

ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) সক্ষমতার অভাব আছে উল্লেখ করে সুব্রত রঞ্জন দাস বলেন, বছরে পাঁচ লাখ মানুষ মোটরসাইকেল কিনলেও বিআরটিএ লাইসেন্স দিতে পারে মাত্র অর্ধেক গ্রাহককে। এটা এ শিল্পের বিকাশে বড় বাধা। এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে তৃতীয় কোনো পক্ষ থেকে আউটসোর্সিং করে সহযোগিতা নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

মোটরসাইকেল শিল্পে অর্থায়নও একটি বড় সমস্যা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চাকরিজীবী একজন মানুষের মোটরসাইকেল কিনতে তার ১০ থেকে ১২ মাসের বেতন লাগে। যেখানে ভারতে দুই থেকে আড়াই মাসের বেতনে হয়। তা ছাড়া ভিয়েতনাম মোটরসাইকেল শিল্পের  সবচেয়ে বড় বাজার। সেখানে ব্যাংক অর্থায়ন করে। অথচ আমাদের দেশে সে সুযোগ নেই। তাই মোটরসাইকেল আরো সুলভ করতে অর্থায়ন জরুরি।’

তিনি বলেন, মোটরসাইকেল শিল্প নিয়ে সরকারের সুন্দর একটি নীতিমালা আছে। এ নীতিমালাকে কাজে লাগাতে হলে সহজে অর্থায়ন ও বিনিয়োগের সুযোগ দিতে হবে। এটা সহজ করা গেলে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়বে, একই সঙ্গে বাড়বে কর্মসংস্থান। চালকদের উদ্দেশ্যে এই কর্মকর্তার পরামর্শ, মোটরসাইকেল জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় একটি বাহন। এটা নিয়ম মেনে চালাতে হবে। ব্রেকিং সিস্টেম, কন্ট্রোল ও ব্যালান্স দেখে কিনতে হবে প্রিয় বাহনটি।

Press Release Links:

Link 1