Ajker Bazzar

স্বাধীন দেশে এই প্রথম ভ্যাট দিতে হবে কৃষককে : এফ এইচ আনসারী

Dr. F H Ansarey
Managing Director and CEO
ACI Motors Limited, ACI Agrolink Limited, Premiaflex Plastics Limited, ACI Agribusinesses
21 June, 2017

Home » Interviews » স্বাধীন দেশে এই প্রথম ভ্যাট দিতে হবে কৃষককে : এফ এইচ আনসারী

বাংলাদেশ সরকার কৃষি খাত নিয়ে একটি পরিকল্পনা করেছে। পরিকল্পনাটা হলো, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকতে হবে ।

বাংলাদেশ সরকার কৃষি খাত নিয়ে একটি পরিকল্পনা করেছে। পরিকল্পনাটা হলো, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকতে হবে । এ বিষয়ে যে পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে তার লক্ষ্য কৃষকের আয় বাড়াতে হবে আর ইল্ড বা উৎপাদনও বাড়াতে হবে । এ দুটো জিনিস হওয়ার পর যেটা করতে হবে টেকনোলজি নিয়ে আসতে হবে। কৃষি ও কৃষকের জন্য যেটা খুব দরকার । এই কাজটা সরকার গত কয়েক বছর ধরে করে যাচ্ছে। কৃষি যন্ত্রপাতিতে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। ধান লাগানোর যন্ত্রপাতিতে ৫০ ভাগ ভর্তুকি দিচ্ছে, আবার ধান কাটার যন্ত্রপাতিতেও ৫০ পার্সেন্ট ভর্তুকি দিচ্ছে। তাহলে দাঁড়ালো কী? সরকার কৃষিতে ভর্তুকি দিচ্ছে যন্ত্রপাতি প্রমোট করার কাজে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা। অর্থাৎ সরকারের কিন্তু একটা নির্দিষ্ট গোল আছে এবং সেভাবে সব কিছু হয়ে আসছে।

এবারই হঠাৎ আমরা দেখলাম কৃষি যন্ত্রপাতির উপর ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। তাও এই ভ্যাট বিক্রয় পর্যায়ে ভ্যাট অর্থাৎ কৃষক যখন যন্ত্রটা কিনবে তখন ইনভয়েসে লেখা থাকবে দাম কত ? আর ভ্যাট কত ? উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ট্রাক্টর যখন বাংলাদেশে আসবে তখন আমাদের ১৫ পার্সেন্ট ভ্যাট দিতে হবে, আবার যখন সেটা কৃষকের কাছে বিক্রি করা হবে তখনো ১৫ ভাগ ভ্যাট আমরা আদায় করে নিব। তাহলে ১৫ পার্সেন্ট ভ্যাটটা থেকে যাচ্ছে । ধান লাগানো যন্ত্রের উপর ১৫ এবং ধান কাটা যন্ত্রের উপর ১৫ পার্সেন্ট ভ্যাট দিতে হচ্ছে। তাহলে এর কী প্রভাব পড়বে ?

১০ লক্ষ টাকার একটা ট্রাক্টরে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ভ্যাট দিতে হবে। পাশাপাশি এর সঙ্গে অন্যান্য যে উপাদান ও যন্ত্রাংশ লাগবে তার সবগুলো যোগ করলে প্রায় ২ লাখ টাকার ভ্যাট দিতে হচ্ছে । ৭ লাখ টাকার একটা কম্বাইন্ড হারভেস্টে দেড় লাখ টাকা ভ্যাট দিতে হচ্ছে।

আবার যে ধান লাগানোর যন্ত্র এখনো সূর্যের মুখ দেখেনি কেবল ইন্ট্রিউিউস হচ্ছে তার উপরও কিন্তু ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার একটা যন্ত্রে ৬০ হাজার টাকার মতো ভ্যাট দিতে হবে। এখন অবস্থাটা কী দাঁড়াবে? কৃষক যখন এগুলো কিনতে যাবে তখন এই অবস্থা দেখে সে চমকে যাবে । সে ভাববে তার কাছে যে টাকা ছিলো তার চেয়ে বেশি টাকা দিতে হবে আর তখনই সে আতংকিত হবে। আর একটা বিষয় হবে কী একটা সংশয়ের সৃষ্টি হবে। মনে হবে ভ্যাট বাড়তেও পারে আবার নাও বাড়তে পারে। একটা হ য ব র ল পরিস্থিতির তৈরি হবে। ফলে কৃষক এক এখন থেকে দেড় মাস পর্যন্ত কোনো যন্ত্রপাতি কিনবে না।

এখন টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। চালের দাম ইতিমধ্যে বেড়ে গিয়েছে, সামনে আরো বড় মৌসুম আসছে বর্ষাকাল। ওই সময় কৃষকের যন্ত্রপাতি দরকার কারণ তারা তখন ধান লাগাবে ও উৎপাদন করবে। এক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যহত হবে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, বিবেকের কাছে আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া উচিত ছিল যে আমরা একটা স্বাধীন দেশের নাগরিক। আজ থেকে ৪৫ বছর আগে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আর স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে আমাদের দেশের কৃষককে তাদের কৃষি যন্ত্রপাতি কিনতে ভ্যাট দিতে হবে কেন ? এবারই প্রথম কৃষি যন্ত্রপাতির উপর ভ্যাট ধরা হয়েছে। কিন্তু কৃষক জানে সরকার উৎপাদন করার সময় ভর্তুকি দেয় । বাজেটে কিন্তু ভর্তুকি রাখা হয়েছে ১৫শ' কোটি টাকা। পাশাপাশি যন্ত্রাংশের উপর ভ্যাট ধরা হয়েছে। তাহলে একদিকে ভর্তুকি দিচ্ছে অন্যদিকে ভ্যাট নিচ্ছে সরকার। এখানে এত বড় ভর্তুকি আছে অথচ বছরে ৮শ' ৯শ' কোটি টাকার যন্ত্রপাতি বিক্রি হয়। এর উপর যদি কৃষককে ভ্যাট না দিতে হতো তাহলে সরকারের আয় কমতো মাত্র ১শ কোটি বা সোয়াশ' কোটি টাকা । তাহলে ওখান থেকে মানে ভর্তুকি কম দিয়ে এখানে যদি ভ্যাট না রাখতো তাহলে কৃষকের ছেলে কৃষি কাজ করতো; কৃষক সহজে কৃষি কাজ করতো ।

জলবায়ু পরিবর্তন ও কৃষি

বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ার কারণে যে সমস্যাটা হয়েছে তা হলো তাপমাত্রা অনেকাংশে বেড়ে গেছে। কৃষি কাজ কিন্তু ঘরে বসে হয় না; পানি দিতে বা মাটি দিতে হয় আর এই উচ্চ তাপমাত্রায় কৃষকেরও কাজ করতে ইচ্ছা হয়না । যদি কৃষকের কাছে যন্ত্র থাকতো তাহলে সহজে কাজ করতে পারতো । সহজে ও সময়মতো কাজটা করতে পারলে উৎপাদন বাড়তো ও খরচ অনেকাংশে কমে যেত। প্রায় ২০ ভাগ খরচ কমে গেলে যেটা হতো তা হচ্ছে কম দামে চাল বিক্রি করেও কৃষকের লাভ হতো। সরকার বলেছিল যে কৃষকের আয় বাড়াতে হবে আর উৎপাদন বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে কৃষি যন্ত্রপাতিই একমাত্র সম্বল আমাদের যেটাতে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব আবার কৃষকের আয়ও বাড়ানো সম্ভব এবং খরচও কমানো সম্ভব। আমি মনে করি এটা মোটেও দায়িত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়নি। এই সিদ্ধান্তে নিশ্চয়ই কোথাও কোনো ভুল হয়েছে। তাই আমি মনে করি, খুব দ্রæত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কেননা কৃষকেরা এখনই যন্ত্রপাতি কিনবে এবং সামনের মৌসুমে তারা কাজে আরো ঝাঁপিয়ে পড়বে। ফলে এখন যে চালের দাম বেড়ে গেছে তা আস্তে আস্তে কমতে থাকবে। তাই এই মুহূর্তে ভ্যাটটা তুলে দেওয়া উচিত। আমি মনে করি, পার্লামেন্টে কৃষকের ভ্যাট নিয়ে যদি আলোচনা না হয় তাহলে সেটা হবে দুঃখজনক ব্যাপার ।

ইদানিং চালের দাম বাড়ছে কেন

চালের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে বলবো যে, আমদের দেশে তেমন কোন পরিসংখ্যান নেই। যে কারণে কত ধান উৎপাদন হচ্ছে বা বা কতটা ধান নষ্ট হয়েছে তা জানা যায়না। এটা একটা সমস্যা। সাধারণত আমরা দেখতে পাই কৃষক ধান চাষ করেই যাচ্ছে, তো চালের দাম বেশি হওয়ার কোনো কারণ থাকেনা। আমাদের দেশে যেটা হয় কৃষক যখন দেখে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতে পারে বা চালের উৎপাদন কম হতে পারে তখন তারা ক্ষতির মুখে পড়ে, ফলে পরে দাম বাড়তে পারে। দ্বিতীয় সমস্যা যেটা তা হলো অতিরিক্ত বৃষ্টিতে কৃষকেরা ধান শুকাতে পারেনা, এর কারণেও দাম বাড়তে পারে। তবে সরকারের হঠাৎ করে এত চাল আমদানি করা উচিত হয়নি কেননা দেশের মানুষ কিন্তু না খেয়ে মরে যাচ্ছে না। কিন্তু চালের পরিমাণ কমে গেলে বা কমার সম্ভাবনা দেখা দিলে ধরে নেওয়া হয় এই বুঝি সব গেল। আমাদের দেশে ৩ কোটি টন চাল লাগে। আর সরকারের কাছে পর্যাপ্ত চাল থাকে। এইটা কমলেও কী আর বাড়লেও কী ? কিন্তু গুদামে চাল কমলে এটাকে একটা বেশ মান যাওয়া হিসেবে ধরে নেওয়া যায়। এতে মানুষ আতংকে পড়ে যায়। তখন মনে করা হয় যারা সুযোগের সন্ধানী তারা কিন্তু তখন হোডিং করতে থাকে হোডিং করলে সরবরাহ কমতে থাকে। তাই আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো, সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত যে ধান চাল কেউ মজুত করতে পারবে না। উৎপাদন করবে কিংবা বিক্রি করবে। দেখবেন পুরো পিকচার চেঞ্জ হয়ে যাবে । চালের দাম কমে যাবে। এটা আমার নিজস্ব মত যদিও আমার কাছে কোনো পরিসংখ্যান নেই।

ধান চালের দাম কমে যাবে যেভাবে

যদি ম্যানুয়ালি চাষ করা হয়,ম্যানুয়ালি পানি দেওয়া হয়, ধান কাটা হয় তাহলে এক কেজি ধান উৎপাদন করতে খরচ পড়ে ২০-২২ টাকা। আর চাষবাস যদি হয় যন্ত্র দিয়ে, পানি দেওয়া হয় যন্ত্র দিয়ে, লাগানো হলো যন্ত্র দিয়ে তাহলে খরচ পড়ে ১৪-১৫ টাকা। এখানে উৎপাদনে কেজি প্রতি কিন্তু ৭-৮ টাকা কমে যায়। যন্ত্র দিয়ে লাগালে সুবিধা হচ্ছে, ধান যখন লাগানো দরকার তখনই লাগানো যায়। ঠিকমত লাইনগুলো হবে ? ধান কাটার পর ধান ঝড়ে পড়বে না। তাতে কী হলো আপনার উৎপাদন বেড়ে গেলো। একদিকে ফলন বাড়লো আরেকদিকে খরচও কমে গেলো। আমরা ধরে নিলাম ফলন বাড়লো না, সেখানে খরচ যদি ৩০% কমে যায়, তাহলে সেটাই তো কৃষকের লাভ। এ লাভটা তো অনেক বেশি লাভ, তাহলে কি হলো কৃষকের উৎপাদন খরচটা কমে গেল। মাঝে মাঝে কৃষক কম দামে বিক্রি করলে কিন্তু সে লাভ করতে পারছে। সেটাই আমি যুক্তি হিসেবে ধরে নিচ্ছি।

বিক্রি না হওয়া এত আম কী করবে মানুষ?

এখন আমের মৌসুম, আমরা দেখছি প্রচুর আম বাজারে এসেছে, দামও কমে যাচ্ছে। আম এবার এক্সপোর্ট হওয়ার কথা কিন্তু তা হচ্ছে না, সবমিলিয়ে আমের বাজার কোথায় যাচ্ছে ? দেখুন, আম, কাঁঠাল কিন্তু আমাদের দেশের প্রধান ফল। আমার মনে হয় প্রতিটি গৃহস্থ লোকের বাড়ির আশ পাশে আম-কাঁঠালের গাছ আছে, কৃষকের বাড়ির উঠোনেও আম গাছ লাগানো আছে। আম কিন্তু একটি প্রধান অর্থকরি ফসল হিসেবে বাংলাদেশে আত্মপ্রকাশ করেছে। ফ্রুট হিসেবে আমের যেমন ভ্যালু আছে তেমনি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনপুট হিসেবেও তার ভ্যালু আছে। আম আমাদের দেশের মানুষ যেমন পছন্দ করে দেশের বাইরের মানুষও পছন্দ করে। বাইরের মানুষ কিন্তু ম্যাংগো জুস খায় এবং এর যথেষ্ট বড় একটি বাজার রয়েছে।

এখন যেটা হয়েছে যে আমার আম আমি হারভেস্ট করবো যখন আমি মনে করবো যে হারভেস্ট করা দরকার তখন। আমের সবচেয়ে বড় এলাকা হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ তারপর নতুন এলাকা হয়েছে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর সেখানে কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন বলেছে যে আম হারভেস্ট করা যাবে একটি নির্দিষ্ট আগে নয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জে বলা হয়েছে ২৫ মে'র আগে আম হারভেস্ট করা যাবে না । আম হারভেস্ট করার ৩ টি পদ্ধতি আছে আছে, আরলি ম্যচিউরড, ম্যাচউির এবং রাইপ মানে পাকা আম । আরলি ম্যাচিউর থেকে ম্যাচিউর হয়ে আসতে সময় লাগে ১০ থেকে ১৫ দিন। পরিণত থেকে পাকতে লাগে আরও ১০-১৫ দিন আর পাকার পরে আম থাকে আরও ১০-১৫দিন। এই যে ৩০-৪৫ দিনের একটি গ্যাপ আছে, ধরেন ৩০-৪৫ দিনের। এই সময়ের গ্যাপটি যদি কৃষকের নিয়ন্ত্রণে থাকে কৃষক কী করবে? তার গাছের সব আম তো আর এক সাথে পাকে না যেগুলো আরলি ম্যাচিউরড সেগুলো আগে নামাবে, তার পর যেগুলো ম্যাচিউরড সেটা নামাবে তার পর পাকাটা নামাবে, লাভ হবে এই আম কৃষক ধরে ধরে আস্তে আস্তে বিক্রি করবে।

এখন যেটা করেছে, দিন নির্ধারণ করার কারণে সবধরনের আম প্রায় একই সাথে নামাতে হচ্ছে, কারণ আর্লি ম্যচিউরডটা ম্যাচিউরড হয়ে গেছে, ম্যাচিউরডটা প্রায় পেকে গেছে। এখন সব আম একসঙ্গে নামানোর পর কী হয়েছে ? তার পরে যখন সময় পেল মাত্র দুই-তিন দিন, তারপর রোজা শুরু হয়ে গেল। আমরা জানি, রোজাতে মানুষ দুইবার খায়। একবার খায় সন্ধ্যার সময়, একবার খায় সেহরির সময়। সকাল বেলায় কেউ আম দিয়ে কিন্তু রোজা ধরবে না, কারণ অনেকেরই অ্যাসিডিটি প্রবলেম আছে। বা এটা সাধারণত কেউ করে না। সাধারণত ইফতার করার পর একটু আম খায়, এক-দুই পিস। কিন্তু আম এদেশের মানুষ কীভাবে খায় ? সকালবেলা খায়, দুপুর বেলা খায়, বিকাল বেলা খায়, নাস্তা খায় সবই আম দিয়ে খায়। যে দেশের মানুষ ছয়-সাত বার আম খায়, সে দেশের মানুষ এখন একবার আম খাচ্ছে। এখন কী হয়েছে? অনেক আম একসাথে পেকে গেছে। অনেক আম একসাথে বাজারে চলে আসছে, যার কারণে আমের দাম স্থানীয় পর্যায়ে যেখানে আম হারভেস্ট হয়,সেখানে অনেক কমে গেছে।

ঢাকা শহরের মানুষ, ঠিক আছে, এখনও পঞ্চাশ-ষাট-সত্তর টাকায় আম কিনে খাচ্ছে। কিন্তু যেখান থেকে আম বিক্রি হচ্ছে, সেখানে পঁচিশ-ত্রিশ টাকায় আম বিক্রি হচ্ছে। প্রবলেম যেটা হলো, এতো আম এখন করবে কী মানুষ ? কিছুদিন পর অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাবে। আম তো রাখা যায় না বেশি দিন। আবার আমরা জানিও না যে, আম হারভেস্ট করে কিভাবে আম রাখতে হয়। আম ধুতে হবে, নাহলে তার গায়ে যে আঠা থাকে, আঠার কারণে ফাঙ্গাস হতে পারে, ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। যে আম ১৫ দিন রাখা যাবে, সে আম ৫ দিনও রাখা গেলো না। এই যে একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে, এই অবস্থাটা আমি বলবো একটা দুর্বিসহ অবস্থা। এই দুর্বিসহ অবস্থার কারণে আমি মনে করি যারা এ সমস্ত সাজেশন দিয়েছে বা যে সমস্ত ফোর্স প্রয়োগ করেছে, এটা একেবারেই করা উচিত হয়নি, এটা অনিয়মতান্ত্রিক হয়ে গেছে। আর মাঝখানে একটা যে ঘটনা ঘটেছে,সেটা হচ্ছে এক্সপোর্টের জন্য আমরা বলেছি কৃষককে, ঠোঙ্গা লাগিয়ে আম চাষ করো। এখন এক্সপোর্ট হবে কি হবে না, একটা দোদুল্যমান অবস্থার মধ্যে রয়েছে। এখন কৃষককে গাছ থেকে তো আম নামাতে হচ্ছে। আম নামিয়ে তো তারা রাখতে পারবে না। এক্সপোর্টের আম তো ম্যাচিউরড বা আর্লি ম্যাচিউরড আম পাঠাতে হয়। পাকা আম এক্সপোর্ট করা যাবে না। এখন এই পরিস্থিতিতে যদি এক্সপোর্ট না হয়, কৃষকের অনেক ক্ষতি হবে এবং ক্ষতি হওয়া শুরুও হয়ে গেছে।

আজকের পত্রিকাতেও দেখলাম এবিষয়ে লেখালেখি হয়েছে। এবং এটাই যদি সত্যি হয় এর পরে কেউ আর ঠোঙ্গা দিয়ে আম চাষাবাদ করবে না। ঠোঙ্গা বা ফ্রুট ক্যাপ দিয়ে আম চাষ করার অ্যাডভান্টেজ দুইটা। একটা হলো, দেখতে অনেক সুন্দর হয় এবং সুমিষ্ট হয়। তার কারণ হলো, এটা সূর্যের আলো থেকে দূরে থাকে বলে কীটনাশক লাগে না, অন্য কিছু লাগে না। তো এই জিনিসগুলো যদি একটু টেকনিক্যালি দিতে গেলাম, কিন্তু যেহেতু মার্কেট পেল না, যার জন্য টেকনোলজিটা রিভার্স হয়ে গেল। এই দুর্বিসহ অবস্থা থেকে কৃষককে মুক্তি দেয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে, সরকার পর্যায়ে নেগোশিয়েট করা। বাইরে যেখানে যেখানে আম যাওয়ার কথা, আমার মনে হয় যে, বিমানের ভাড়া কমিয়ে দিতে পারে সরকার যাতে করে ব্যবসায়ীরা আমগুলো তাড়াতাড়ি বিদেশে পাঠাতে পারে। আমকে লাভজনক ফসল হিসেবে ধরে কৃষকের সুবিধার জন্য সরকারের জরুরি ব্যবস্থা নেয়া উচিত।এয়ারপোর্টে রেড অ্যালার্ট

কীটতত্ত¡ ডিপার্টমেন্ট বলেছে যে, আমরা তোমাদের আম সব চেক করবো তারপর ঠোঙ্গা খুলতে দিবো, এই যে একটা ব্যাপার এটা অভ্যন্তরীণ একটা ব্যাপার। আমাদের কৃষকের উপরে বিশ্বাস থাকা উচিত, তারা বলছে প্রি চেক করার পর যাবে। আমাদের দেশের ব্রিলিয়ান্ট বিজ্ঞানীরা এটা সুপারভাইজ করেছে। তাই কনফিডেন্স তো নিজের উপর থাকা উচিত। তাতে হবে কি কেউ তো আম পাঠিয়ে ব্যাক করে আনবে না। আমার মনে হয় কীটতত্ত¡ বিভাগের এতো কড়া হওয়া উচিত না। এখানে ছাড় দেয়া উচিত,আমাদের দেশের মিশনগুলো বাইরে কথা বলতে পারে যে আমরা তোমাদের জন্য এতো আম প্রস্তুত করেছি, এসব আম আসতে দাও। এখানে কীটনাশক বা হেভি মেটাল অ্যাপ্লাই করেনি এগুলো ভালো আম। এভাবে এর মার্কেট ক্রিয়েট করে কৃষককে সহযোগিতা করা উচিত।

ইউরোপে অন্যান্য দেশ থেকেও প্রচুর আম যায়, ফিলিপিনস, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম থেকে যায়। আমাদের দেশ থেকে এক্ষুণি ৫-৬ হাজার টন আম যেতে পারে। আমি যতটুকু শুনেছি এবার প্রায় ৩ হাজার টন আম এক্সপোর্ট করার জন্য ঠোঙ্গা করে রেখেছে। এ ঠোঙ্গা কিন্তু একটা ব্যয়বহুল ব্যবস্থা। ১ কেজি আমে ঠোঙ্গা করতে প্রায় ১২-১৩ টাকা খরচ হয়, এটা কিন্তু অনেক টাকা। আর ঠোঙ্গা লাগিয়ে যদি মার্কেটে বিক্রি করতে আসে তাহলে ৯০ টাকায় বিক্রি না করলে লাভ হবে না, ৯০ টাকায় আম বিক্রি এখন খুব কঠিন। বাজারে ৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে কৃষকের মাঠে আসলে পাওয়া যায় ২৫-৩০ টাকায়।

কৃষি নিয়ে পড়াশোনায় আগ্রহ সৃষ্টি

কৃষিতে পড়াশোনার কয়েকটি ধাপ আছে, একটি হলো কৃষিতে হায়ার ডিগ্রি, বিএসসি-এমএসি। তারা গবেষণা করবে। আরেকটি হলো ডিপ্লোমা, এরা মাঠে-ময়দানে কৃষকের পাশে থেকে কাজ করবে। অন্যটি হলো সেমি ডিপ্লোমা যারা কৃষিপণ্যের ডিলার হবে , ট্রাক্ট্রর চালাবে, পাওয়ার টিলার চালাবে। আমাদের দেশে হায়ার ডিগ্রি প্রচুর পরিমাণে বের হচ্ছে প্রতি বছর। শেষে যেটা বলেছিলাম সেটা হলো সেমি-ডিপ্লোমা,এর উপর জোর দেয়া উচিত। আমাদের দেশে কোনও ডিলার যারা সার বেচে, বীজ বেচে ,কীটনাশক বেচে, কৃষি যন্ত্রপাতি বিক্রি করে অথবা কৃষির অন্যান্য রসদ বিক্রি করে তাদের কমপক্ষে ১৫ দিনের ট্রেনিং ছাড়া কোন অবস্থাতে লাইসেন্স দেয়া উচিত নয়। এখন কি হয়েছে সমস্ত টেকনোলজি দেশের বাইরে থেকে আসে। দেশীয় টেকনোলজি আছে কিন্তু যথেষ্ট না। প্রাইভেট সেক্টরগুলো কি করে, তারা তাদের ডিলারদের কাছে টেকনোলজিগুলো দিয়ে দেয় আর কৃষকের প্রবলেম হলে দৌঁড়ে আসে ডিলারদের কাছে। তাদের কাছ থেকে বাকি নেয়। কখনো তাদের কথা শুনে কৃষক কিন্তু লাভবান হয়েছে । এই অশিক্ষিত ডিলার কৃষককে অ্যাডভাইস করছে বা তার হাতে পণ্য তুলে দিচ্ছে। এতে কখনো লাভ হয় কখনো লাভ হয় না। এজন্য এইসব ডিলারদের ট্রেনিং হওয়া উচিত। আমি তো ১৫ দিন বলেছি, এটা ৩ মাস হওয়া দরকার। যারা অলরেডি ডিলার তাদের লাইসেন্স রিনিউ করতে হলে ৩ মাস ট্রেনিং দরকার। আর যারা লাইসেন্স ছাড়া ডিলার তাদেরও ১৫দিন থেকে ৩ মাস ট্রেনিং করতে হবে।

লোকাল কোম্পানিগুলোর জন্য ট্যাক্স হলিডে

আমাদের যে সকল যন্ত্রপাতি সফলভাবে প্রচলন হয়েছে যেমন, ট্রাক্টর এবং পাওার টিলার। এই দেশের প্রায় ৯০ ভাগ জমি ট্রাক্টর এবং পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষ হয়। আর ধান লাগানোর যন্ত্র মাত্রই ছাড় হয়েছে। এর মাধ্যমে কেউ যদি ব্যবসা করে তার মুনাফা হবে, কেউ যদি ধান লাগায় তাহলে ফলন বাড়বে, তার মুনাফা হবে, কম্বাইন্ড হারভেস্টারের ক্ষেত্রে- হাওরে যখন ধান ডুবে গেলো অথচ ধান কাটার লোক নেই, সারা দেশ যখন বর্ষার পানিতে থৈ থৈ করছে এবং ধান কাটার শ্রমিক নেই তখন এই যন্ত্র দিয়ে অনেকেই ধান কেটেছে।

এভাবে ধান কাটলে সব জায়গায় লাভজনকভাবে ধান কাটা সম্ভব। এই যন্ত্রপাতির কোনোটাই দেশে উৎপাদিত হয় না প্রায় সবগুলো বাইরে থেকে আসে। পাওয়ার টিলারের ক্ষেত্রে ছোট খাটো ইনসেন্টিভ আছে। তবে তা অ্যাসেম্বলের সময়। কিন্তু যেহেতু বিক্রি পর্যায়ে ভ্যাটের কথা বলা হয়েছে তাহলে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, অন্যান্য হারভেস্টার, ধান লাগানোর যন্ত্র যাই কিনুক না কেন, সেটা দেশি হোক আর বিদেশি হোক তাকে ভ্যাট দিতেই হবে অর্থাৎ কৃষককেই ভ্যাট দিতে হবে। এবং এটা পুরোপুরিভাবে ইম্পোজ করা হয়েছে কৃষকের উপরে। যারা আমদানি করছে তারা কিন্তু ভ্যাট দিবে না। আমদানিকারকরা ভ্যাট আদায় করে নিচ্ছে কৃষকের কাছে থেকে। মূল কথা হলো কৃষককেই ভ্যাট দিতে হচ্ছে। এই ভ্যাট দেওয়ার ব্যাপারটি প্রোডাক্ট কিংবা আমদানিকারকদের সাথে সম্পৃক্ত নয়।

আমরা কি বলতে পারি এটা সরকারের দ্বৈত নীতি?

সরকারের অনেক দায়িত্ববান হওয়া উচিত। আমি মনে করি কোথাও ভুল হয়ে গেছে। অথবা কেউ দায়িত্বহীন ভাবে কাজটি করেছে। দায়িত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হলো, একদিকে যেমন কৃষককে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে অন্যদিকে তার ওপর ভ্যাট যুক্ত হচ্ছে। এই ভ্যাট থেকে মাত্র ১২০-১৩০ কোটি টাকা আসবে। এটা পরিমাণে খুবই কম। তাছাড়া এই সকল যন্ত্রপাতিতে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ৫০% পর্যন্ত। তাহলে এটা কনফিউজিং হবে। সবমিলিয়ে আমি মনে করি না যে এটা খুব একটা ভালো কাজ হয়েছে। ইমিডিয়েটলি এটা সংশোধন করা উচিত।