পানির পাম্প বা মটরের কমন কিছু সমস্যার সহজ সমাধান

19 March, 2021

Home » Blog » পানির পাম্প বা মটরের কমন কিছু সমস্যার সহজ সমাধান

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পানির ব্যবহার অপরিসীম। আর এই পানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজন হয় পানির পাম্পের। এই পানির পাম্প বা মটরের ছোট খাটো কিছু সমস্যার কারণে আমাদের অনেক সময় ধকল পোহাতে হয়। এ সি আই ওয়াটার পাম্প-এর পক্ষ থেকে রইলো এই সব ছোট খাটো ‘কমন’ কিছু সমস্যার সহজ সমাধান এবং পানির পাম্প বা মটরের বেটার পারফর্মেন্স এবং মেইনটেনেন্সের জন্য টিপস এন্ড টিকস।

 

পানির পাম্প বা মটরে পানি প্রবেশ করলে করণীয়

পানির পাম্প বা মটরে পানি ঢুকে যাওয়া একটা কমন সমস্যা। আমরা যারা পানির পাম্প ব্যবহার করছি প্রায় এই সমস্যাই পড়ি। বিভিন্ন কারণে পানি প্রবেশ করতে পারে। বন্যা বা বেশি বৃষ্টির কারণে বাসাবাড়িতে পানি উঠে গিয়ে এ ধরণের সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। পানি ঢুকার কারণে পাম্প বা মটরের কয়েল পুড়ে যাওয়ার মত ঘটনাও ঘটছে।

পাম্প বা মটরে যদি পানি ঢুকে যায় তাহলে দ্রুত বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ করে দিয়ে পাম্পটি একটি শুকনো জায়গায় রেখে একটি শুকনো কাপড় দিয়ে ভাল করে মুছে নিতে হবে। এরপর পাম্পটির ফ্যান কভার ও শেষ অংশের কভার খুলে সূর্যের আলোতে অথবা ইলেকট্রিক লাইটের আলোতে ৮/১০ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। পানি সম্পূর্ণ শুকিয়ে যাওয়ার পর পুনরায় পাম্পটিতে বৈদ্যুতিক সংযোগ দিয়ে চালানো যাবে।

পাম্প চালু থাকা অবস্থায় পানি ঢুকলে, পাম্পের কয়েল পুড়ে যেতে পারে। যার কারণে পাম্প থেকে পোড়া গন্ধ বের হতে পারে এবং কয়েলের তার পুড়ে কালো হয়ে যায়। পাম্পে পানি প্রবেশ করলে কয়েলের ইনসুলেশন নষ্ট হয়ে মটর ঘোরা বন্ধও হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও পানি প্রবেশের কারণে পাম্প এর বিয়ারিং জ্যাম হয়ে যায়, যার কারণেও পাম্প এর মটর ঘোরা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত আপনার নিকটস্থ লোকাল ইঞ্জিনিয়ার বা প্লাম্বার সাথে যোগাযোগ করে পাম্পটি সার্ভিস এর ব্যবস্থা নিতে হবে।  

ড্রেনেজ পাম্পের মাধ্যমে পানির উত্তোলন বা স্থানান্তরের সময় পাম্প বন্ধ হয়ে গেলে করণীয়

ড্রেনেজ পাম্পের মাধ্যমে পানির উত্তোলন বা স্থানান্তরের সময় পাম্প বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের করণীয় কি? সাধারণত, বিভিন্ন কন্সট্রাকসনের কাজে, পুকুর, নর্দমা বা ড্রেনের পানি উত্তোলন বা স্থানান্তরের জন্য ড্রেনেজ পাম্প ব্যবহার করা হয়। এই পাম্পটি দিয়ে সহজেই এক জায়গা থেকে পানি তুলে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা হয়।

ড্রেনেজ পাম্প চালানোর সময় ‘কমন সমস্যা’ হল শক্ত ময়লা বা আবর্জনা ড্রেনেজ পাম্পটির ভিতর আটকে গিয়ে, ইম্পেলার জ্যাম হয়ে যাওয়া এবং পাম্প হটাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়া। ইম্পেলার-এর কাজ হচ্ছে মূলত ঘূর্ণনের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করে এক জায়গায় থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা।

এ সমস্যার সহজ সমাধান হলো, ড্রেনেজ পাম্পটি বসানোর সময় ভূমি থেকে কমপক্ষে ৬ ইঞ্চি ওপরে স্থাপন করতে হবে এবং পাম্পটির মুখে একটি শক্ত জালি খাঁচা ব্যবহার করতে হবে যাতে শক্ত ময়লা বা আবর্জনা সহজে প্রবেশ করতে না পারে।

এছাড়া কোন কারণে যদি পানি উত্তোলনের সময় শক্ত ময়লা বা আবর্জনা ড্রেনেজ পাম্প এর ভিতরে আটকে গেলে, ইম্পেলার জ্যাম করে ফেলে যার কারণে যার কারণে মটর বন্ধ হয়ে যায় এবং মটর দীর্ঘক্ষণ না ঘোরার কারণে কয়েল জ্বলে যেতে পারে এবং ক্যাপাসিটর ও নষ্ট হতে পারে। এ ধরণের পরিস্থিতিতে দ্রুত আপনার নিকটস্থ লোকাল ইঞ্জিনিয়ার বা প্লাম্বার সাথে যোগাযোগ করে পাম্পটি সার্ভিস করতে হবে।

ইলেকট্রিক মটর বন্ধ হয়ে যাওয়া বা ঘূর্ণন গতি কমে যাওয়ার কারণ এবং করণীয়

সাধারণত কল-কারখানায়, ধান কাটা, খড় কাটা, মশলা ভাঙ্গা ইত্যাদি কাজে ইলেকট্রিক মটর ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশে তাঁত শিল্প সম্বলিত যে ধরণের কল-কারখানা আছে, সে সব জায়গায়তেই ইলেকট্রিক মটর ব্যবহৃত হয়।

ইলেকট্রিক মটর চালানোর সময় ‘কমন সমস্যা’ হল, মটরটি হটাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া বা ঘূর্ণন গতি কমে যাওয়া। মূলত ইলেকট্রিক মটরে ব্যবহৃত স্টারটিং ক্যাপাসিটর এবং রানিং ক্যাপাসিটর নষ্ট হওয়া বা এর ক্যাপাসিটি বা মান কমে যাওয়ার কারণে এ ধরণের সমস্যা দেখা যায়।

এই সমস্যা সমাধানে যাওয়ার আগে আমরা জেনে নেই যে, স্টারটিং ক্যাপাসিটর এবং রানিং ক্যাপাসিটর এর মুল কাজ কি। স্টারটিং ক্যাপাসিটর মূলত মটরকে চালু করার কাজে ব্যবহার করা হয় এবং রানিং ক্যাপাসিটর মটরের ঘূর্ণন গতিকে স্বাভাবিক রাখার কাজ করে।

ইলেকট্রিক মটর চালু করার পূর্বে, মেশিন অবশ্যই লোড বা বোঝা মুক্ত রাখতে হবে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় যে, খড় কাটা মেশিনে খড় কাটার পর, অবশিষ্ট যে খড় মেশিনে থেকে যায় তা অবশ্যই মটর পুনরায় চালু করার আগে মেশিন থেকে বের করে ফেলতে হবে তা না হলে অধিক শক্তি ব্যয় হবে এবং অধিক লোডের কারণে স্টারটিং ক্যাপাসিটর নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং ঘূর্ণন গতি বাধাগ্রস্ত হয়ে রানিং ক্যাপাসিটরও নষ্ট হতে পারে, অনেক ক্ষেত্রে কয়েল পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।

এ ধরণের সমস্যা প্রতিরোধে, ইলেকট্রিক মটররের ক্যাপাসিটি অনুযায়ী লোড দিতে হবে এবং মটর চালু করার পর ২০-৩০ সেকেন্ড পরে মেশিনে লোড দিতে হবে। তাহলে ক্যাপাসিটর নষ্ট হওয়ার বা কয়েল পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবেনা।

যদি ইলেকট্রিক মটর একবারে বন্ধই হয়ে যায় বা মটরের ক্যাপাসিটি অনুযায়ী ঘূর্ণন গতি কমে যায় তাহলে দ্রুত আপনার নিকটস্থ লোকাল ইঞ্জিনিয়ার বা প্লাম্বার সাথে যোগাযোগ করে পাম্পটি সার্ভিসের ব্যবস্থা করতে হবে এবং প্রয়োজনে লোকাল ইঞ্জিনিয়ার এর পরামর্শ অনুযায়ী ক্যাপাসিটর পরিবর্তন করতে হবে।

 

হাফ ঘোড়া পানির পাম্প বা PK60 পাম্প এর মটর ঘোরা বন্ধ হয়ে যাওয়া ও পানি না ওঠার কারণ এবং করণীয়

আমাদের দেশে বহুল ব্যবহৃত পাম্প হল ‘হাফ ঘোড়া পানির পাম্প’ বা ‘PK60’। এই হাফ ঘোড়া পানির পাম্পটিতে একটি সমস্যা প্রায়ই দেখা যায় সেটি হল, মাঝে মাঝে বা পাম্পটি কিছুদিন টানা বন্ধ থাকলে পাম্পের ইম্পেলার জ্যাম হয়ে গিয়ে পাম্পটির রোটর বা স্যাফট ঘোরা বন্ধ হয়ে যাওয়া যার কারণে বৈদ্যুতিক সংযোগ চালু থাকা সত্ত্বেও পাম্পটি পানি উঠাতে পারেনা এবং এ অবস্থায় রোটর বা স্যাফট না ঘোরার কারণে পাম্প থেকে শব্দ বা আওয়াজও আসতে পারে।

এ ধরণের অবস্থা দেখা দিলে, বৈদ্যুতিক সংযোগ চালু করার পূর্বে একটি বৈদ্যুতিক টেস্টার নিয়ে কুলিং ফ্যান এর ঢাকনার মধ্য দিয়ে মটরটির রোটর বা স্যাফট ডানে বামে কিছুক্ষণ ঘুরাতে হবে এবং এতে ইম্পেলার জ্যাম ফ্রি হয়ে যাবে। এর পরও যদি ইম্পেলার জ্যাম ফ্রি না হয় সেক্ষেত্রে কুলিং ফ্যান এর ঢাকনা খুলে হ্যামার বা হাতুড়ি দিয়ে মটরের স্যাফটকে ছোট ছোট কয়েকটি আঘাত করলে ইম্পেলার জ্যাম ফ্রি হয়ে যাবে।

অনেক ক্ষেত্রে, হাফ ঘোড়া পানির পাম্প এর কয়েল পুড়ে যেতে পারে বা ক্যাপাসিটর নষ্ট হয়ে যেতে পারে, সেক্ষেত্রে আপনার নিকটস্থ লোকাল ইঞ্জিনিয়ার বা প্লাম্বার সাথে যোগাযোগ করে পাম্পটি সার্ভিসের ব্যবস্থা করতে হবে এবং প্রয়োজনে ক্যাপাসিটর পরিবর্তন করতে হবে।

পানির পাম্প বা মটর বার বার বন্ধ এবং সয়ংক্রিয়ভাবে চালু হওয়ার কারণ এবং করণীয়

        আমরা এলাকাভেদে পানির পাম্প নিয়ে খুব কমন একটি সমস্যা দেখে থাকি, তা হচ্ছে বার বার পানির পাম্প বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং আবার স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যাওয়া। এ ধরণের সমস্যা মূলত দেখা দেয় ভোল্টেজ আপ ডাউন এর কারণের। বাসাবাড়িতে সাধারণত আমরা যে ভোল্টেজ ব্যবহার করি সেটি মূলত টু-টুয়েন্টি ভোল্টেজ অর্থাৎ ২২০ ভোল্টেজ। পানির পাম্প বা মটর চালানোর জন্য আদর্শ ভোল্টেজ হচ্ছে ১৮০-২২০ ভোল্টেজ। এলাকাভেদে এই ভোল্টেজের পরিমাণে তারতম্য হয়ে থাকে। আমরা জানি যে, পানির পাম্প বা মটরের কয়েলের সাথে থার্মাল প্রটেক্টর নামে একটি অটো সার্কিট থাকে যা হাই ও লো ভোল্টেজে মটরের কয়েলকে পুড়ে যাওয়া হতে রক্ষা করে। যখন কোন পাম্প বা মটর ২২০ এর ওপরে হাই ভোল্টেজে চলবে অথবা ১৮০ এর নিচে লো ভোল্টেজে চলবে তখন উভয় ক্ষেত্রেই মটরের তাপমাত্রা গরম হয়ে ১৪০ ডিগ্রি অতিক্রম করলে থার্মাল প্রটেক্টর বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ করে দেয় এবং মটরটি অটোম্যাটিক বন্ধ হয়ে যায় এবং তাপমাত্রা যখন ১৪০ ডিগ্রির নিচে চলে আসে তখন মটরটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যায়।

        এ ধরণের সমস্যা প্রতিকারে আমরা যে এলাকায় অবস্থান করি সেই এলাকার ভোল্টেজের আপ ডাউন সম্পর্কে পূর্ণ ধারনা থাকতে হবে এবং স্বাভাবিক ভোল্টেজে অর্থাৎ ১৮০-২২০ ভোল্টেজ থাকা অবস্থায় পাম্প বা মটর চালাতে হবে।

এছাড়াও ভোল্টেজের পরিমাণ অনুযায়ী পানির পাম্প বা মটরের ক্যাপাসিটর এর পাওয়ার কমিয়ে বা বাড়িয়ে আমরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানির পাম্প বন্ধ এবং চালু হওয়ার সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে পারি। এক্ষেত্রে নিকটস্থ লোকাল ইঞ্জিনিয়ার বা প্লাম্বার এর সাথে যোগাযোগ করে তার পরামর্শ অনুযায়ী ক্যাপাসিটর এর পাওয়ার কমিয়ে বা বাড়িয়ে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ পানির পাম্প চালানো যাবে।

পানির পাম্প বা মটরের ছোট খাটো ‘কমন’ কিছু সমস্যার সহজ সমাধান, বেটার পারফর্মেন্স ও মেইটেন্সের টিপস এন্ড টিকস পেতে এ সি আই ওয়াটার পাম্পের ফেসবুক পেজে সাবস্ক্রাইব করুন।

Facebook: www.facebook.com/ACIWATERPUMP

YouTube: www.youtube.com/c/ACIMotorsLtd